বেঁচে থাকার স্বপ্ন যখন মোটরসাইকেল

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:০১

নুর উদ্দিন

হাওর বেষ্টিত এলাকা সুনামগঞ্জের বেকার যুবকদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন মোটরসাইকেল। ছোট খাটো অসংখ্য জলাধারের সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে আছে টাংগুয়ার হাওড়। পানিবন্দি এলাকা হওয়ার কারণে এক সময় অন্যান্য উপজেলার সাথে সুনামগঞ্জ জেলার যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল নদীপথ। বর্ষায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা লঞ্চ এগুলোই ছিল মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে পাল্টে গেছে চিরচেনা সেই দৃশ্য।

সুনামগঞ্জ সুরমা নদীতে ব্রিজ নির্মাণ হওয়ার কারণে সুনামগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলা গুলোর সাথে মানুষের যোগাযোগ ব্যাবস্থার চিত্র বদলে গেছে পুরোটাই। স্থল পথেই এখন বেশি চলাচল করছেন সুনামগঞ্জবাসী। এই সুযোগে প্রায় তিন হাজার বেকার যুবকের কর্ম সংস্থানের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে ভাড়া চালিত মোটরসাইকেল।

শুনতে অবাক লাগলেও মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন জেলার বহু তরুণ। এর সাথে সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজর, জামালগঞ্জ, বিশম্বপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা উপজেলার জনগণের যোগাযোগ ব্যাবস্থাও হয়ে উঠেছে অনেক সহজ। যেখানে পরিবারের বোঝা হয়ে ছিল হাজার হাজার বেকার যুবক তারা আজ স্বাবলম্বী। ভাড়া চালিত মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহণ কর্ম হিসাবে বেছে নেওয়ায় আজ তারা মুক্ত হয়েছে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে। একেকটি মোটরসাইকেল যেন হয়ে উঠেছে একেকটি পরিবারের জীবিকা নির্বাহের উপায়।

সুনামগঞ্জ সুরমা নদীর ব্রিজ পার হলেই দেখা মিলে সারিবদ্ধ ভাবে করে রাখা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। এখান থেকে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছে দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে শত শত যুবক। সিএনজি, রিক্সা, ইজিবাইক থেকে যাত্রীরা নামলেই এগিয়ে আসে মোটরসাইকেল চালকরা। যাত্রীর সাথে ভাড়া সংক্রান্ত আলোচনার পর এখান থেকে মোটরসাইকেলে করেই যাওয়া যায় জামালগঞ্জ, বিশম্বপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা উপজেলাসহ প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলে। গ্রামে যাওয়ার রাস্তা কাঁচা হওয়ায় সাধারণত মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোন ভারিযান সেদিকে যেতে পারে না। সেই সুযোগে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে যান চালকরা। কিছু টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বাজারে বা গ্রামে পৌছে দেওয়াই তাদের কাজ।

সুনামগঞ্জ থেকে জামালগঞ্জে যেতে যেতে আলাপ হয় মোটরসাইকেলের ড্রাইভার সজীবের সাথে। কথায় কথায় উঠে আসে তার জীবনের গল্প। সে জানান, আগে আমি বেকার ছিলাম আমার এক বন্ধু নিজের মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাত। প্রায় সময় সে আমাকে বলত বেকার থেকে লাভ কী তোর তো সাইকেল আছে, ভাড়ায় চালা দিন শেষে অন্তত ১৫০/২০০ টাকা আয় হবে। কিন্তু আমার নিজস্ব গাড়ি ছিলো না তখন। যেটা ছিল সেটার মালিক ছিলেন বড় ভাই। 

সজীব বলেন, পরে তাকে একদিন বললাম আমার পরিবার থেকে মোটরসাইকেল কিনে দেবে না। বন্ধুটি আমার কথা শুনে দুই দিন পরে আমাকে ফোন করে বলল তোর জন্য মোটরসাইকেল পেয়েছি। তার সঙ্গে আলোচনায় বুঝলাম প্রতি দিন খরচ বাদে মালিককে ২০০ টাকা দিতে হবে। প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। কয়েক দিন চালানোর পরে প্রতিদিন খরচ বাদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বা কোন কোন দিন ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হত। কয়েক মাস রোজ হিসাবে চালানোর পরে আব্বাকে কোন মতে রাজি করিয়ে ১টি পুরাতন মোটরসাইকেল কিনি। বাবাও আমার আগ্রহ দেখে কিনে দেন। ৮ মাস পরে আমার আয় দিয়ে পরিবার চালিয়েও কিছু টাকা সঞ্চয় হয়। এরপর পুরাতন মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে ও জমানো কিছু টাকা দিয়ে নতুন মোটরসাইকেল কিনি। ৩ বছর হল আমি এই পেশায় আছি এবং আল্লাহর রহমতে ও আব্বা-আম্মা, ছোট ভাই-বোন নিয়ে মোটামোটি ভালই আছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত