চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২১

সাহস ডেস্ক

‘মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ দিন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা নিন’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও শুরু হয়েছে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম।

জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আজ ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন মা ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর একশ’ কিলোমিটার এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

২২ দিনের এ অভিযানে এসব এলাকায় মাছ আহরণ, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সম্পূণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে সরকার ঘোষিত ইলিশ অভয়াশ্রম এলাকা চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ কার্যক্রম বাস্তবায়নার্থে জনসচেতনতামূলক সভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার লাগিয়ে চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার, ইব্রাহিমপুর, রাজরাজেশ্বর, লক্ষ্মীপুর, হরিনাঘাট, চান্দ্রা চৌরাস্তা মোড়, হাইমচরের ইশানবালা, চরভৈরবি, আলগীবাজার, মতলব উত্তরের ষাটনল, আমিরাবাজার, জহিরাবাদ, রমতলব দক্ষিণের খেরুদিয়া, মুন্সিরহাট, সফরমালি, দাশাদি, কল্যাণপুরসহ পদ্মা-মেঘনার ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কয়েকটি অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের একশ’ কিলোমিটার এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির করতে সভা, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, পুলিশ সদস্যরা নদীতে মা-ইলিশ রক্ষায় কাজ করবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের প্রধান মৎস্য গবেষক ডাক্তার মাসুদ হোসেন খান জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ অভিযানের ফলে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১ কেজি ডিম উৎপাদন হয়। যার ফলে ৩৯ হাজার ২৬৮ কেজি জাটকা যুক্ত হয়, সর্বোপরি জেলেরা ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করে।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, মিঠা পানির কারণে চাঁদপুর ইলিশ প্রজনন এলাকা হিসেবে পূর্ণিমার আগে ও পরে ২২ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময় যেনো নিরাপদ এলাকা হিসেবে ইলিশ মাছ সম্পূর্ণ ডিম ছাড়তে পারে সে জন্য প্রশাসনসহ সবাই কাজ করবে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস অ্যাক্ট ১৯৫০ অনুযায়ী ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ বা বিক্রি নিষিদ্ধ। সরকারের এ আদেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আবদুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’-এর কৃতিত্ব জেলাবাসীর। সবার সহযোগিতায় বিগত দিনে অভিযান সফল হয়েছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে যার সুফল আমরা পেয়েছি। আমি আশা করি, আগের মতো এ বছরও প্রশাসনকে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। আইন অমান্য করে কোনো জেলে মাছ আহরণ করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় আমরা কঠোর সিদ্ধান্তে নিতে বাধ্য হবো। 

তিনি আরো বলেন, কোনো জেলে নদীতে নামতে পারবে না। যদি কোনো জেলে মাছ ধরতে নদীতে যায়, তাহলে তাদের সরাসরি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। সেই ব্যক্তির জেল হবে, জামিন পাবে না এবং জব্দ করা জাল ও নৌকা সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত