লক্ষ্মীপুরে ৩২৫ কোটি টাকার সুপারি!

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:০০

উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির রাজধানী হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে এ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ছয় হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমের শুরুতেই সুপারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজারে কেনা বেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

একদিকে স্থানীয় বাজারে সুপারির চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এলাকার চাষীদের মাঝে সুপারি চাষে আগ্রহও বাড়ছে। অন্যদিকে, অন্যান্য চাষাবাদের মত ঝুঁকি না থাকায় সুপারি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন জেলার বেশির ভাগ কৃষক।

জানা যায়, সুপারি গাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ২৫-৩০ বছর ফলন দেয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় দিন দিন এ অঞ্চলে সুপারী উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। 

চলতি বছর মৌসুমের শুরুতেই সুপারি বিক্রির বড় হাট বসে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী, সদর উপজেলার দালাল বাজার, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজার, খাসের হাট, মোল্লারহাট, রামগতি উপজেলার রামগতি বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারিকে ঘিরে চলছে জমজমাট ব্যবসা।

এখানকার উৎপাদিত সুপারির ৭০ ভাগ খালডোবা, পুকুর ও পানি ভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। 

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর লক্ষ্মীপুর জেলায় ৬ হাজার ৩’শ ৫৫ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৩ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮শ ৭৫ হেক্টর, কমলনগরে ৩শ ৫০ ও রামগতি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত সুপারি যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। শুরুতে ২৮’শ থেকে ৩ হাজার টাকা প্রতি কাওন (১৬ পোন) সুপারি বিক্রি হলেও মাঝামাঝিতে দাম একটু কমে যায়। আবার শেষ মুহূর্তে দাম বেড়ে যায়।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে। পরে এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারি পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মূলত কার্তিক মাসের শেষে আর অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারির ভরা মৌসুম। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষি, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। লক্ষ্মীপুরে সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকরা সুপারির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এবার সুপারির বাম্পার ফল হয়েছে। উৎপাদিত এ সুপারি থেকে ৩’শ ২৫ কোটি টাকা বেশী আয় হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত